May 5, 2024, 10:58 pm

চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড, অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহ

চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গায় আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে সবজি ক্ষেত, ক্ষতির তথ্য নেই কৃষি বিভাগে।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্র থেকে বৃহস্পতিবার (২৫) এপ্রিল বিকেল তিনটায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল ১৪ শতাংশ।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ৪১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ৩৯.৬ ডিগ্রী। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৩৯ শতাংশ।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রী রেকর্ড করা হয়, এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৯ শতাংশ।

রোববার (২১ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৯ শতাংশ।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩২ শতাংশ।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রী। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪২ শতাংশ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস,বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৭ শতাংশ।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৭ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, বর্তমানে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, মাঝে একদিন বাদে চুয়াডাঙ্গায় ৫দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার আওতায় রয়েছে। আর্দ্রতা বেশী অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জন্য গরমে অস্বস্তি বেশী লাগছে।

তিনি জানান, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কোনভাবেই কমার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় ক্রমাগত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে সবজি ক্ষেত পানি (সেচ) দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন কৃষকেরা। সবজির পাশাপাশি আম-লিচু ও কাঁঠালে গুটি ঝরে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহে ক্ষেতের ফসল পুড়লেও সে সব তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। বারং বার এ জেলার ৪টি উপজেলায় সবজির ক্ষতির পরিমান জানাতে ব্যার্থ হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন ডিঙ্গেদহের হাটখোলা গ্রামে গেলে সেখানকার কৃষক স্বপন বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে করল্লার আবাদ করেছি। ২-৩ দিন পর পর পানি দিয়েও তা রক্ষা করতে পারছিনা। করল্লা গাছ থেকে ঝরে পড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দিননাথপুর গ্রামের হারিস মিয়া বলেন, এই তাপদাহে বেশী ক্ষতি হচ্ছে কচু, পান, তরমুজ ও কাঁচা মরিচের। ঘনঘন সেচ দিয়েও কোন ভাবেই শুকিয়ে যাওয়া থেকে ঠেকানো যাচ্ছেনা। তাছাড়া সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপদিত পণ্য বিক্রি নিয়ে আমি শঙ্কিত। কারন অধিক দামে এগুলো বিক্রি করতে হবে।

অভিন্ন কথা বলেন, সদর উপজেলার হানুরবাড়াদী গ্রামের কৃষক দোয়াল্লিন। তিনি বলেন, তার ফলন্ত কলা গাছের কাঁদি পড়ে যাচ্ছে, তরমুজের ফল ঝরে যাচ্ছে, বেগুন গাছে বেগুন ধরছেনা, কচু গাছ রোদে পুড়ে যাচ্ছে, শসা ক্ষেত তাপপ্রবাহে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

দেরীতে লাগানো ভূট্টা ক্ষেতেরও একই দশা। কোন ভাবেই ফসল ধ্বংস ঠেকানো যাচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্রমাগত সেচ দিয়ে কিছু ফসল ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর কত টাকা ব্যয় করে সেচ দেয়া যায়।

চুয়য়াডাঙ্গার হানুড়বাড়াদী গ্রামের আবুল বলেন, তিনি তার ৬ বিঘা জমিতে বিনা-২৫ জাতের ধানের আবাদ করেছে। ধান ভাল হয়েছে। রোদ গরমের কারনে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি নিজের স্যালোমেশিন চালিয়ে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করে ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আশা করছি এ জমি থেকে ১৫০ মন ধান হবে। মাজরা পোকা না ঠেকাতে পারলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবো।

একই গ্রামের ধান চাষী আনসার ও খাইরুল বলেন, সরকার নির্ধারিতের চেয়ে বেশী ৩ হাজার টাকা ব্যয় করে বিএডিসির সেচ পাম্প থেকে আমাদের সেচ সুবিধা নিতে হচ্ছে। টাকা বেশী লাগলেও ঠিকমত সেচ সেবা পাচ্ছি।

সদর উপজেলার আকন্দবাড়ীয়া গ্রামের আম চাষী ওমর আলী বলেন, আমবাগানে সেচ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে।

দামুড়হুদা উপজেলার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক রবগুল বলেন, গতবারও তীব্র খরায় লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছিল। এবারও একই অবস্থা হবে মনে হচ্ছে। বৃষ্টি নেই। গুটি পুষ্ট হচ্ছে না। অনেক গুটি ঝরে যাচ্ছে।

চলমান তাপদাহে ফসল রক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, অতি তাপবাহের কি কি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা এখনো নিদৃষ্ট করতে পারিনি। উপজেলা পর্যায়ে কাজ চলছে। দু’এক দিনের মধ্যেই আমরা ফসলের ক্ষতির পরিমান জানাতে পারবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :